Translate

শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮

আশ্বিনের আড্ডা




(ছোটদের ওয়েব ম্যাগাজিনঃ ইচ্ছামতীতে প্রকাশিত)


স্থানঃ বিশাল বটগাছের পাতায় ঢাকা ডালপালাসময়ঃ সকাল আটটা সাড়ে আটটা। পাত্রঃ অনেকে, তাদের পরিচয় আস্তে আস্তে মিলবে।
কাকঃ        কা, কা, কা খবর টিয়াদিদি, আজ মনে হচ্ছে খুব আনন্দে আছো?
টিয়াঃ         আনন্দ হবে না, বলিস কিরে? আজ আকাশের রং দেখেছিস? রোদ্দুরের ঢং দেখেছিস?
কাকঃ        কাঃ কাঃ কাঃ, আকাশের আবার রং কি গো? রোদ্দুরের নাকি আবার ঢং ?
কোকিলঃ     কার কাছে কি বলছো টিয়াদিদি, ও রংয়ের কি বুঝবে, কালো রং ছাড়া আর কিছু রং ও চেনে নাকি, ছাই?
কাকঃ        দ্যাখ কোকলে, তোর সঙ্গে তো আমি কথা বলছি না, কেন গায়ে পড়ে ঝগড়া করছিস?
কোকিলঃ     কুঃ কুঃ কুঃ, তোর সব কিছুই কু মানে খারাপ, পচা। দুর্গন্ধ।
কাকঃ        আমাকে বেশি খ্যাপাস না, কোকলে, আমি কিন্তু রেগে গেলে ঠকঠকাঠক ঠুকরে দিই। তুই বা কি এমন রংদার পাখিরে। কেলে তো তুইও। সারা বছর তো তোর পাত্তা পাওয়া যায় না।  বসন্তের দু আড়াই মাস তোর যত ডাকাডাকি। সারাক্ষণ কুউ, কুউ। তোর চোখে তো ভালো কিছুই নজরে পড়ে না, সর্বদাই কু দেখিস। এদিকে নিজের বাসাটাও বানাতে পারিস না, আমার বাসায় ডিম পাড়িসতাও তোর লজ্জা হয় না? বোকা হাঁদা মানুষগুলো, তোর কুডাকে মুগ্ধ হয়ে খালি কবিতা লেখে।
কোকিলঃ     তাই বুঝি তোর হিংসে হয়, হিংসুটি? ওই যে, দুমাস ডাকাডাকি করি, তাতেই আমাকে সারা বছর সবাই মনে রাখে। আমার ডাক শোনার জন্যে সবাই অপেক্ষা করে। আর তুই সারা বছর সর্বদা বাড়ির আনাচে কানাচে কা কা করিস বলে, লোকে তোকে হুস হুস করে তাড়িয়ে দেয়। তুইও চেষ্টা কর না, কা কা না করে কু কু বলতে...হিহি হিহি...পারবি?
শালিকঃ       লোকে আমাদের বলে, আমরা নাকি ঝগড়া করি। তোদের যদি দেখত তাহলে এ কথা বলতো না। কি শুরু করলি কি তোরা? থাম না একটু। টিয়াদিদির কথাটা তো চাপাই পড়ে গেল।
কাঠঠোকরাঃ যা বলেছিস শালিক। সেই ভোর থেকে উঠে, কাঠে ঠোঁট ঠুকে ঠুকে, ঠোঁটটা কন কন করছিল, তাই এলাম একটু জিরোতে। সে জো আছে।  এই কাক আর কোকিলে শুরু করে দিলে ঝগড়া
চড়াইঃ        কাঠে ঠোঁট না ঠুকলেই হয়।
কাঠঠোকরাঃ  বোঝো কাণ্ড, কাঠে ফুটো না করলে, পোকা পাব কোথায়, থাকবার জন্যে বাসাই বা বানাবো কোথায়?
চড়াইঃ        বাঃ রে, আমরা বুঝি কিছু খাই না। আমরা বুঝি বাসা বানাই না?
কাঠঠোকরাঃ  তুই আর বেশী বড়াই করিস না রে, চড়াই। তুই তো লোকেদের বারান্দার কোণে, ঘরের আলমারির মাথায় বাসা বেঁধে দিব্বি কাল কাটিয়ে দিলি। ওকে আবার বাসা বানানো বলে নাকি?
চড়াইঃ        কেন? যেখানেই বানাই, আমরাই তো বানাই। হ্যাঁ, বাসা বানানোর সময় মেঝেয়, বিছানায় খড়কুটো পড়লে লোকে বিরক্ত হয় বটে, কিন্তু মেনেও নেয়। কিছু দুষ্টু লোক আছে, তারা বাসা ফেলেও দেয়, বাইরে। তেমন বাড়িতে বাসা বানাতে আমাদের বয়েই গেছে। আমি যে ঘরে বাসা বানাই, সে খুব ভাল, জানো কাঠঠোকরা দাদা। সে একটুও বিরক্ত হয় না। শীতকালের বিকেলে  জানালা দরজা বন্ধ করার সময় বলে, কিরে ঢুকেছিস? আমি বাসার থেকে মাথা তুলে দুবার বলি চিলিক চিলিক। তারপর জানালা বন্ধ করে। আবার ঐ শীতের ভোরেই ঘরের মধ্যে উড়তে উড়তে ডাকি চিলিক চিলিক...ঘুম ভেঙে ভালো লোকটা জানালা খুলে পর্দা সরিয়ে দেয়।
পায়রাঃ       বক বকম। বক বকম। তোরা এতো বকতেও পারিস, বাপরে। টিয়া দিদি সেই যে একটা  কথা বলতে গেল, তারপর তোদের বকবকের ঠ্যালায়,  একদম চুপ হয়ে গেল।
কাঠঠোকরাঃ ঠিক, ঠিক। টিয়া দিদি, কি বলছিলে বলো।
টিয়াঃ         বলছিলাম, আজকে আকাশের রং দেখেছিস। কি সুন্দর নীল। যেন ঝকঝক করছে।
কাকঃ        এতে আবার নতুন কি হল? আকাশের রং তো নীলই।
পায়রাঃ       তোর মাথা আর মুণ্ডু। এমন রং কোনদিন হয়? হয় না। বর্ষাকালে তো সারাক্ষণ মেঘে ঢাকা থাকে, দেখাই যায় না। গরমকালে আকাশ ঝাঁঝাঁ করে, তাকানো যায় না। আর শীতকালে নীল হয় ঠিকই কিন্তু এমনটি হয় না।
টিয়াঃ         ঠিক বলেছিস, পায়রা। মনে হচ্ছে না, কাল সারারাতে ভগবান অনেক লোকজন দিয়ে মেজে ঘষে আকাশটাকে পরিষ্কার করে রেখেছেন?
কাঠঠোকরাঃ  কিন্তু টিয়াদিদি, একদম পরিষ্কার নয় কিন্তু, দু একটা মেঘ এখনো রয়ে গেছে এদিক ওদিকে।
মাছরাঙাঃ     একই রং ভালো লাগে নাকি? নানান রং থাকলে তবে না মানায়? আর ওগুলো তো জলো মেঘ নয়, তুলোর মতো হালকা।  ওতে আর বৃষ্টি নেই, একদম ফাঁকা। ভেসে ভেসে উড়ে বেড়াবে আকাশময়। ওরা না থাকলে আকাশের নীল রংটা খুব একটা ভালো লাগত না, টিয়াদিদি, তাই না, একঘেয়ে লাগত।
টিয়াঃ         এই তো ধর না, তোদের যে গায়ের নানান রং, কি সুন্দর তোদের দেখতে লাগে। এই মাছরাঙা যখন গাছের ডাল থেকে ডানা মেলে পুকুরের জলে মাছ ধরতে ঝাঁপ দেয়। গাছের মগডালে বসে আমি দেখি, আহা চোখ জুড়িয়ে যায়। একটু একটু হিংসেও হয়।
কাঠঠোকরাঃ কেন, হিংসে হয় কেন?
টিয়াঃ         দেখছিস না, আমার তো একটাই রং। তুইও যেমন কাঠঠোকরা, তাল বা নারকেলের গুঁড়িতে বসে, ঠুকঠুক করে গর্ত করে পোকা খাস, আর আমি পেয়ারা গাছের ডালে পেয়ারা খেতে খেতে তোকে দেখি। কি সুন্দর রং তোর পালকে।
পায়রাঃ       এটা তুমি, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেললে, টিয়া দিদি। তুমিই বা কি কম সুন্দরী, শুনি। আর তোমার একটাই রং কোথায়? তোমার অমন টুকটুকে লাল ঠোঁট, আর অমন সবুজ রং। বিকেলবেলা তোমরাও যখন ঝাঁক বেঁধে গাছে ফেরো, আমিও বাড়ির চিলেকোঠার আলসেয় বসে তোমাদের দেখি। কি সুন্দর লাগে তোমাদের। ঠিক এক ঝলক সবুজ আলোর মতো, চোখ ফেরাতে পারি না।
কোকিলঃ     আচ্ছা, আচ্ছা নে, তোদের অনেক রং তোরা খুব ভালো। আমি আর কাক কুচকুচে কালো। তখন রোদের কথা কি বলছিলে, টিয়াদিদি, বলো না বলো।
টিয়াঃ         এই, তোরা সব্বাই দেখ, কোকিল এখন কাকের সঙ্গে কি সুন্দর ভাব করে নিল। খুব ভালো, রে খুব ভালো। কোকিল, তোর কালো রং ভালো নয়, কে বলল? তোর ডাক শুনে আমাদের সক্কলের মন ভালো হয়ে যায়, সে কথাটাও তো সত্যি।  অমন গলা আমাদের আর কার আছে বল?
কোকিলঃ     তবে? দেখলি রে, কাক। আমার ডাক শুধু মানুষ নয়, সকলেই ভালোবাসে।
কাকঃ        কাঃ কাঃ, যাঃ যাঃ, আর বেশী বড়াই করিস না।   
টিয়াঃ         আর কাক তোকেও বলি, তুই বা এমন ঝগড়া করিস কেন, কোকিলের সঙ্গে? না হয় তোর বাসায় কোকিল দুটো কি তিনটে ডিমই পাড়ে আমাদের বাসাতেও তো পাড়তে পারত। তা তো পাড়ে না, কেন জানিস?
কাকঃ        নাঃ নাঃ, জানি না তো।
টিয়াঃ         ওরে বুদ্ধু, আমরা সবাই তোকে ভরসা করি। এই যে এই গাছের ডালে ডালে আমাদের বাসা, আমরা জানি, বেড়াল এলে, কোন দুষ্টু ছেলে এলে, তোরা কা কা করে ডেকে, ঠুকরে তাদের তাড়িয়ে দিতে পারিস। আমরা কতো নিশ্চিন্তে থাকি, জানিস? কোকিল তোর বাসাতে ডিম পাড়ে একই কারণে, ও জানে, কাকের বাসায় উঠে ডিম চুরি করা যে সে কম্মো নয়।
কাকঃ        (মাথা চুলকে) তাই? এটা কোনদিন ভাবি নি তো!
কোকিলঃ     কুঃ কুঃ কুঃভাবার মতো মগজ আছে তোর ?
কাকঃ        অ্যাই কোকলে, চুপ কর, ঠুকরে তোর মাথা ফাটিয়ে দেব। টিয়াদিদি, ওসব কথা তুমি ছাড়ো, তুমি বরং, তোমার রোদ্দুরের ঢং নিয়ে কি বলছিলে, সেইটা বলো।
মাছরাঙাঃ     হ্যাঁ, কোকিল, তুই না বড্ড ফাজলামি করিস। শোন্‌ না, টিয়াদিদি কি বলে। টিয়াদিদি তুমি বলো।
টিয়াঃ         নীল আকাশ, তুলোর মতো হাল্কা সাদা মেঘের কথা তো শুনলি। আর আজকে সকালে রোদ্দুরের রংটা খেয়াল করেছিস? আর রোদ্দুরের সেই তাপও আর নেই?
পায়রাঃ       ওঃ। একদম আমার মনের কথা বলেছো, টিয়াদিদি। আজ সকালে আমার গলায় পালকের নীল রংয়ে যে রোদ্দুর পড়েছিল, তার রং ছিল ঠিক সোনার মতো। কি সুন্দর চিকচিক করছিল আমার পালকগুলো। অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তুমি বলাতে মনে পড়ল।
কাকঃ        আরে, টিয়াদিদি, তুমি ঠিক বলেছ। আজই তো সকালে আমি আমার পালকগুলো মেলে দিয়ে দিব্বি রোদ পোয়াচ্ছিলাম। বর্ষায় ভিজে ভিজে আমার পালকে না, ছোট্ট ছোট্ট পোকা কামড়ায়। এই রোদ্দুরে পালক মেলে দিলে পোকাগুলো পালায়, আর কি আরাম পাই। আজ রোদ্দুরে একটুও কষ্ট হচ্ছিল না, খুব মজা লাগছিল।
টিয়াঃ         যাক, সব্বাই তাহলে লক্ষ্য করেছিস, কিন্তু ভাবিস নি।
মাছরাঙাঃ     কি ভাববো বলো তো, টিয়াদিদি?
চড়াইঃ        আমি জানি, টিয়াদিদি, কি বলবে।
শালিখঃ       অ্যাঃ, তুই এইটুকুনি একটা পাখি, তুই কি জানিস, রে?
চড়াইঃ        হ্যাঁ, আমি জানি, আমি জানি। তার মানে পুজো আসছে, পুজো এসে গেছে। তাই না, টিয়াদিদি?
টিয়াঃ         (মিষ্টি হেসে) ঠিক তাই। আশ্বিন মাস, পুজোর মাস। আর ক’দিন পরেই পুজো। তাই ঐ আকাশ অমন নীল আর রোদ্দুর এমন সোনার মতো। এখন চাঁপা, বেল, জুঁই, মাধবী আর ফুটবে না। এখন ফুটবে শিউলি, টগর, পদ্ম, গন্ধরাজ।  গাছে গাছে আমার গায়ের রংয়ে পাতার রং মিলে যাবে, আর তাতে সোনা রোদ্দুর এসে চিকমিক করে হাসবে। নদীর ধারে ধারে, বুড়ো দাদুর মতো সাদা মাথা দুলিয়ে হাসবে রাশি রাশি কাশফুল।  কিন্তু চড়াই, তুই কি করে জানলি রে?
চড়াইঃ        কাল সন্ধেবেলা আমি ছানাদুটোকে তখন ভুলিয়ে ভালিয়ে গান টান শুনিয়ে অনেক কষ্টে সবে ঘুম পাড়িয়েছি। আমারও একটু ঘুমের ঘোর আসছিল। এমন সময় ভালো লোকটা ঘরে এল, সঙ্গে তার ছোট্ট মেয়ে আর বউ। বিছানার ওপর একগাদা জিনিষ ধপাস ধপাস করে ফেলল। আমি আমার ডানাদুটো একটুখানি মেলে ছানাদের কানদুটো চেপে দিলাম, যাতে ওদের ঘুম না ভাঙে। তারপর একটু উঁচু হয়ে বাসার থেকে দেখলাম, ও মা, কত জামা কাপড়। তার কত রকমের রং।  একটা একটা করে বের করছে, আর বলছে এটা ফুলকি বোনুর। এটা পল্টু ভাইয়ের। এটা ঝিলিকদিদির। এটা রুকুদাদার। এটা আমার।  এটাও আমার। এটাও আমার। আর এটাও আমার। সে সব জামা কাপড়ের কি সুন্দর রং আর কি বাহারের নকশা।
মাছরাঙাঃ     সত্যি আমি কি, বোকা গো টিয়াদিদি। আমিও তো কাল দেখেছি, পুকুরের ওই পাড়ে অনেক বাঁশ ফেলেছে, মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। আমার মাথাতেই এল না, যে ওটা পুজোর মণ্ডপ! দুগ্‌গা মা আসছেন, তাঁর ছেলে মেয়েদের নিয়ে। ইস্‌, কি বোকা, আমি কি বোকা। পুজোর সময় বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোকে বেশ লাগে, তাই না টিয়াদিদি? কি সুন্দর সব রং।
শালিকঃ       শুধু রং? আর নতুন জামা কাপড়ের গন্ধ? সেও কি কম সুন্দর নাকি। আমি তো মানুষের খুব কাছাকাছি যাই, তাই জানি।
কাঠঠোকরাঃ  আমারও খুব ইচ্ছে হয় জানিস? অন্ততঃ এই সময় ওদের বাচ্চাগুলোর কাছে যেতে। কিন্তু ভয় লাগে।  যদি ধরে ফেলে, আর খাঁচার মধ্যে বন্দী করে রাখে?
শালিকঃ       ইস্‌, ধরলেই হল আর কি। আমাকে ধরতে এলেই ফুড়ুৎ উড়ে যাই। আরও কি করি জানো? উড়ে যাওয়ার সময় ডানায় শিস দিই। ঠিক দুয়ো দেওয়ার মতো- ধরতে পারলে না।
পায়রাঃ       ওই পুজোর মণ্ডপ বানানোর পর কেউ কোনোদিন গেছিস? ভেতরটা কেমন হয় দেখেছিস?
চড়াইঃ        আমি তো প্রায়ই যাই।
শালিখঃ       আমিও। যখন বেশী ভিড় ভাট্টা থাকে না, দুপুরের দিকে ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে, উড়ে উড়ে দেখে আসি, মায়ের প্রতিমা। গণেশদাদা, কাত্তিকদাদা, লক্ষ্মীদিদি আর সরস্বতীদিদিকে।
চড়াইঃ        আর ঐ দুষ্টু লোকটা? একদম সেই দুষ্টু লোকটার মতো, যে আমার বাসা ভেঙে দিয়েছিল, বিছানায় খড়কুটো ফেলেছিলাম বলে। আচ্ছা, আমি কি ইচ্ছে করে ফেলেছিলাম? আমার ছোট্ট ঠোঁট থেকে পড়েই তো গিয়েছিল, বাবা। তাই বলে আমার বাসাটা ফেলে দিতে হবে?
টিয়াঃ         আচ্ছা, আচ্ছা, আর কাঁদিস না। তোর ভালো লোকটা তো তোকে ভালোই বাসে, কাঁদিস না। কিন্তু মায়ের কাছে দুষ্টু লোক কি করে আসে?
পায়রাঃ       আসে কি গো, টিয়াদিদি, ওই দুষ্টু লোকটার বুকে ত্রিশূল দিয়ে, মা দুগ্‌গাই তো ওকে মেরে ফেলবে। তাই জন্যেই তো পুজো। অষ্টমীর শেষ আর নবমী শুরুর সন্ধিক্ষণেই তো ঘ্যাচাং ফু। দুষ্টু লোকটার দুষ্টুমি ঘুঁচে যাবে। তারপর দশমীর দিন বিজয়ার আনন্দ। দুষ্টু লোকেরা আর নেই, শুধু আনন্দ আর আনন্দ। নারকেল নাড়ু খাও। কুচো নিমকি। মটরের ঘুগনি। মিষ্টি। 
চড়াইঃ        আমরা কত্তো খেয়েছি, বাচ্চারা তো খুব ভালো হয়, ওরা এমনিই দেয়। আবার অনেক সময় ওদের হাত থেকে পড়েও যায়। ঘুগনির মটরগুলোর যা স্বাদ হয় না, ওফ্‌, এখনই আমার ঠোঁট সুড়সুড় করছে।
শালিকঃ       আমি মটর খেয়ে দেখেছি, এমন কিছু আহামরি নয়, তার চেয়ে নিমকি, আহা, অনেক ভালো।
কাকঃ        (ঠোঁট চুলকে) আমিও তো খুব খাই, এই পুজোর কটা দিন। খুব বাচ্চাদের হাত থেকে, আমি তো আবার মাঝে মাঝে ছোঁ মেরে নিয়েও নিই
পায়রাঃ       তোরা বড্ড লোভী কিন্তু, যাই বলিস আর তাই বলিস। মানুষের ওই সব খাবার খেতে ভালো হলেও, বেশি খাস না। শরীর খারাপ হবে।  মানুষ যা কিছু খায়, খায় মশলা দিয়ে, মিষ্টি দিয়ে, নুন দিয়ে, ঝাল দিয়ে। ওসব আমাদের পক্ষে মোটেই ভালো না। চড়াই, তোর ওই ভালো লোকের ছোট্ট মেয়েটি রোজ সকাল সকাল ছাদে গিয়ে আমাদের চালের দানা, গমের দানা দেয়। আমরা অনেকে গিয়ে খুব মজা করে খাই। আবার ছোট্ট একটা থালায় খাবার জলও দেয়। গম-টম খেয়ে, জলে পেট ভরিয়ে আমরা ঘুরে ঘুরে ওই মেয়েটির সঙ্গে খুব খেলা করি। আর গলা ফুলিয়ে বলি বকম বকম, কি রকম সকম...     
মাছরাঙাঃ     তোরা সব মানুষের কাছঘেঁষা পাখি। আমরা বাবা, দূর থেকে দেখেই মজা পাই। হাসি খুশি রঙীন জামাকাপড় পড়ে বাচ্চাগুলো কি আনন্দই না করে। আমি পুকুর পাড়ের জামরুল গাছের পাতার আড়ালে বসে সব দেখি। খালি কষ্ট হয় রাত্রে, এত আলো, এত আওয়াজ, এত ভিড়। সে যাকগে, কটা মাত্র তো দিন। সারাবছর ভারি বস্তার মতো ব্যাগ ঘাড়ে করে বেচারা বাচ্চাগুলো রোজ স্কুলে যায়। বিকেলে বাড়িতে পড়াতে আসেন দিদিমণি। তারপরেও আছে সাঁতার শেখা, ছবি আঁকা, গান, গিটার, কুংফু। ওরা যদি সারা বছর ঐ কষ্ট সহ্য করতে পারে, আমরাও না হয় চার পাঁচটা দিন একটু মেনেই নিলাম। কি বলো, টিয়া দিদি, তাই না?
টিয়াঃ         ঠিক বলেছিস,রে মাছরাঙা, একদম ঠিক। চল, অনেক হল, এখন আবার আমরা বের হই, উড়ে চলি ফুলবাগানে। সকলকে খবর দিই, পুজো আসছে, আসছেন মা দুগ্‌গা। পায়রা আর চড়াই, তোদের কিন্তু দায়িত্ব রইল ঠিক কবে পুজো সেটা জেনে আসার। ঠিক আছে? চল, উড়ি।

..০০.০০..

কোন মন্তব্য নেই: