Translate

শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮

সৌদামিনীর ঘরে ফেরা



এই লিংকে ক্লিক করলে বাড়ি বসে পেয়ে যাবেন, "দশে দশ" গল্প সংকলন। 

http://sristisukh.com/ss_wp/product/%e0%a6%a6%e0%a6%b6%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a6%b6/?fbclid=IwAR08yJhrMXE6sQy01kjitrsscUDnSsmbjMU3KaN7ve2CE_T9age-wWiiX08


এই সংকলনের দশম গল্প  "সৌদামিনীর ঘরে ফেরা"-র কিছু অংশ



......গতকাল অনেক রাত্রে ফিরে, মৃগাঙ্কর খাওয়া দাওয়া মিটতে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। সকালে এসে ঘুম ভাঙালেন মা। মাকে দেখে অবাক লাগে মৃগাঙ্কর। গতকাল রাত্রে মায়েরও শুতে অনেক দেরি হয়েছিল। অথচ আজ তিনি যখন মৃগাঙ্কর ঘুম ভাঙাতে এলেন, রোজ যে সময় স্নান সেরে পুজোআর্চা সেরে ফেলেন, তার থেকে এতটুকুও ব্যত্যয় হন নি।
‘খোকা, উঠে পড় বাবা, কাল রাত্রে তোর খুব কষ্ট গেছে। নিচে চল, বাবা তোর জন্যে বসে আছে। খান কতক লুচি ভেজে দি, গরম গরম খা’ গতকাল রাত্রের ছেড়ে রাখা মৃগাঙ্কর ময়লা জামাকাপড়গুলো তুলে নিতে নিতে বললেন,
‘হ্যারে, বৌমা তোকে কিছু লিখেছে, কবে আসতে পারবে? মেয়েটা কতদিন হল নেই, পায়ে পায়ে ঘুরত, আর মা মা ডাকতো। খুব খালি খালি লাগে আজকাল’। গামছা নিয়ে নিচের বাথরুমে যেতে যেতে মৃগাঙ্ক বলল,
‘তুমি বৌমা বৌমা করছো, তার তো ওদিকে কোন হেলদোল নেই’।  মা একটু হাসলেন, বললেন,
‘ও সব তুই বুঝবি না, খোকা। সব মেয়েই বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ির হয়ে যায়। ও যে কি মরমে জ্বলে মরছে, সে আমি জানি’
‘কি জানি, মা। আমি তো কিছু বুঝি না’। মা হাসতে হাসতে বললেন,
‘তোর আর বুঝে কাজ নেই, তুই নিচে আয়, বামুনদিকে বলছি, কখানা লুচি ভাজতে’।

জলখাবারের পর নিজের ঘরে ফিরে এসে কি করবে ঠিক ভেবে পাচ্ছিল না মৃগাঙ্ক। একবার পাড়ায় গেলে হয়। অনেকদিন বাড়ির বাগানটা ঘুরে দেখা হয় নি। সেটাও ঘুরে এলে হয়। অথবা বাড়ির ছাদে। বাড়ির ছাদে বহুদূর পর্যন্ত মাঠঘাট, গাছপালা দেখতে বেশ লাগে। কোনটাই কিন্তু করল না মৃগাঙ্ক, মেহগিনির বিশাল খাটে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল। এই খাটটা লতার বাবার দান। ভাঁজ করা দুইহাতে মাথা রেখে শুয়ে, মৃগাঙ্ক ছাদের সিলিং দেখছিল, শাল কাঠের কড়ি বরগা। এমন সময় পিসিমার গলা পেল,
‘কি করছিস, খোকা? কাল অনেক রাত্রে ফিরেছিস শুনলাম’। বিছানায় উঠে বসল মৃগাঙ্ক, বলল,
‘এসো পিসিমা, এসো। বসো। কেমন আছো’? পিসিমা আসাতে একটু যেন স্বস্তি পেল মৃগাঙ্ক, পিসিমা কথা বলতে ভালোবাসেন আর এখন মৃগাঙ্কর সে সব কথা শোনার অখণ্ড অবসর। খাটের একপাশে বসতে বসতে পিসিমা বললেন,
‘আর পেরে উঠি না রে, খোকা। শরীর আর বইছে না। এমনিতে রাত্তিরে ঘুম হয় না, কাল যে কী কাল ঘুম ধরল, কে জানে। তুই কখন এলি, এত ডাকাডাকি করলি, কিছুই জানতে পারলাম না। বৌমা কবে ফিরছে কিছু জানিস নাকি রে, খোকা’?
‘না গো, পিসিমা, জানি না’।
‘ও মা, চিঠি পত্তর দেয় না? আমরা তো না হয় মুখ্যুসুখ্যু মানুষ, ক লিখতে কলম ভাঙে। বৌমা তো তা নয়, ওতো দুপাঁচ কলম লিখতে পারে’?
‘লেখে চিঠিপত্র মাঝে মধ্যে দেয়’।
‘তাই বল। তা সেখানে কিচু লেখে নি, কবে ফিরছে। কেমন আছে’।
‘নাঃ’
‘এ বাপু ভারি অন্যায়। আর তো তুমি বাপের মেয়েটি নও। শ্বশুরঘরে এসেছ। তোমার এখন ভরা ভাদরের পরিপুণ্ণ সংসার। শ্বসুর, শ্বাসুরি, বর, ঘর, গেরস্ত; আমার কথা না হয় নাই বললাম, আমি আজ আছি, কাল নেই। কবে কোনদিন গোবিন্দর ডাক আসে তার অপেক্ষাতেই আছি। এসব ফেলে এতদিন ধরে বাপ-মা-ভাই-বোনদের সঙ্গে হা হা হি হি করা শোভা পায় না, বাছা’।  পিসিমা মৃগাঙ্কর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, মৃগাঙ্ক বিরক্ত হচ্ছে কিনা, মনে হল হয় নি। আবার শুরু করলেন,
‘তুই পিসিমাকে যাই ভাবিস না কেন, খোকা, আমি বাপু এইসব অশৈরণ সহ্য করতে পারি না। আর তোকেও বলি পুরুষমানুষ ম্যাদামারা হলে চলে? একটু হাঁকডাক, রোখঠোক না থাকলে পুরুষমানুষকে মানায় না। তুই বাবা একটু শক্ত হ। সব কিছু যদি মুখ বুজে সয়ে নিস, সবাই যে ঘাড়ে পা চাপিয়ে দেবে, বাবা? আমি বলি কি, বৌমার বাবাকে বেশ কড়া করে একটা চিঠি লেখ। ঘরের লক্ষ্মী এত বার মুখো হলে, মা লক্ষ্মী সংসার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন, চঞ্চলা হন’

পিছন ফিরে বসেছিলেন বলে, মা এসে কখন দরজার সামনে দাঁড়িয়েছেন, পিসিমা দেখতে পাননি। কিছুক্ষণ ঠাকুরঝির কথা শুনে, মা আস্তে আস্তে ঘরে পা দিলেন, মৃগাঙ্ককে ডেকে বললেন,
‘খোকা, বাড়ি এসে সেই থেকে ঘরেই তো বসে রয়েছিস। যা না, পাড়া থেকে একটু ঘুরে আয় নাতুই কলকাতায় গেলে তোর বন্ধুরা আসে, জিগ্যেস করে তুই কবে ফিরবি। এতদিন পর ফিরলি, সবার সঙ্গে দেখা না করে, ঘরে বসে রয়েছিস কেন, রে? আর ঠাকুরঝি, খোকার সঙ্গে তোমার কথা শেষ হয়েছে? আমার সঙ্গে নিচেয় চলো তো, আমার হাতে হাতে একটু কাজ করে দেবে’।     

মৃগাঙ্কর বাবার থেকে বয়েসে অনেকটাই ছোট এই পিসীমার দুর্ভাগ্যের কোন সীমা নেই। মৃগাঙ্কর যখন বছর সাত আট বয়েস তখন পিসীমার বিয়ে হয়েছিল। খুব স্পষ্ট না হলেও, বেশ মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা বিয়েবাড়ির হৈচৈ আনন্দের কথা। এ বাড়ির সবচেয়ে ছোট্ট মেয়েটির বিয়ে উপলক্ষে ধুমধাম হয়েছিল খুব। বউভাতের দিন পিসীমার শ্বশুরবাড়িতে বাবার সঙ্গে মৃগাঙ্কও গিয়েছিল। তাদের মতো পিসীমার শ্বশুরবাড়িও যথেষ্ট স্বচ্ছল, কিন্তু অনেক বড়ো পরিবার। পিসেমশাইদের অনেক ভাই বোন মিলে খুব জমজমাট আনন্দের সংসার। বউভাতের অনুষ্ঠান সেরে বাড়ি ফেরার পরদিনই বাবার কাছে ভয়ংকর দুঃসংবাদটা এসে পৌঁছেছিলনতুনপিসেমশাই সর্পদংশনে মারা গেছেন। ঠাকুমা তখনও বেঁচে ছিলেন, মেয়ের এই চরম সর্বনাশের সংবাদে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন।...


এই লিংকে ক্লিক করলে বাড়ি বসে পেয়ে যাবেন, "দশে দশ" গল্প সংকলন। 

http://sristisukh.com/ss_wp/product/%e0%a6%a6%e0%a6%b6%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a6%b6/?fbclid=IwAR08yJhrMXE6sQy01kjitrsscUDnSsmbjMU3KaN7ve2CE_T9age-wWiiX08



কোন মন্তব্য নেই: