Translate

মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১৮

"তিন এক্কে তিন - হেমকান্ত মীন" - ছোটদের জন্য তিনটি উপন্যাসের সংকলন।


ঘরে বসে বই পেতে ক্লিক করেই দেখুন না, এই লিংকেঃ 




হেমকান্ত মীন 


........."নীলকাকুর মায়ের ঘরে আবার আমরা জমায়েত হলাম পৌনে আটটা নাগাদ। বাড়িতে বানানো গরম গরম বেগুনি আর সঙ্গে চা। আমি চা খাই না, তবে বেশ অনেকগুলো বেগুনি খেয়ে ফেললাম। দিব্বি লাগল খেতে। চায়ে চুমুক দিয়ে, মা তাঁর ডাইরি খুললেন, অনেকগুলো পাতা উল্টে তিনি এক জায়গায় থামলেন, মুখ না তুলেই বললেন,
‘মেসোমশাইয়ের ডাইরিতে মোট ৮৬৭টা এন্ট্রি আছে, তার মধ্যে এই তিনটে নামে একটু বিশেষত্ব আছে-   
১. Hemkanta Meena, hearing plate, Village: Shashasthi, কে রাত ১৮.০০
২. Rupsa Majhi with red eyes – conjunctivitis (?)
৩. Chunilal Verma: age 75-85, Zero Point DI-GRAM - প্রাকৃতিক ও  চিকিৎসাই হয় নি।

মেসোমশাই সমস্ত নাম, অসুখের নাম অথবা যাই কিছু লিখেছেন এই ডাইরিতে সমস্তই ইংরিজিতে। কিন্তু এর মধ্যে দুজনের ক্ষেত্রে তিনি বাংলা ব্যবহার করেছেন, আর রূপসা মাঝির চোখ লাল হয়েছে – কনজাংটিভাইটিস লিখেও তিনি দ্বিধায় রয়েছেন। কেন? আর আমরা ডাক্তার না হয়েও বুঝতে পারছি অসুখগুলো কেমন যেন, মোটেই বিশ্বাসযোগ্য কোন অসুখ নয়।  
প্রথমেই বলি হেমকান্ত মীনা – রাজস্থানী নাম। তাঁর হিয়ারিং প্লেট হয়েছে? সে আবার কি অসুখ? কিন্তু এটাকে বাংলা করলে দাঁড়াবে শোনার প্লেট, শোনার পাত, সোনার পাত। তালব্য শ টাকে দন্ত্য স ভাবলে কিন্তু আমরা সূত্রটা বেশ পেয়ে যাচ্ছি। এরপরে চট করে ধরে ফেলতে অসুবিধে হয় না, আ কার বাদ দিলে রাজস্থানী ভদ্রলোক আসলে হেমকান্ত মীন মানে সোনার বরণ মাছ – সোনার পাত। এরপরে আসছে ভিলেজ মানে গ্রাম। গ্রামের নাম শাষষ্ঠী। গ্রামের এমন নাম হতে পারে? কে জানে হতেও পারে, বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি। কিন্তু শষষ্ঠী মানে ১৬০ হলেও তো হতে পারে। আর গ্রাম যদি ধরি ওয়েটের ইউনিট, তাহলে কি দাঁড়াল – সোনার বরণ মাছ, সোনার পাত, গ্রাম ১৬০, এই অব্দি বুঝে ফেললে বাকিটা নিয়ে ভাবতেই হয় না – কারণ বাঙালিরা অন্ততঃ ১৮.০০ মানে সন্ধে ছ’টাকে খামোকা রাত বলবে না। আসলে ওটা ক্যারাট ১৮, সোনার মধ্যে খাদের পরিমাণ।
প্রথমটা বুঝে নেওয়ার পর, পরেরটা বেশ সহজ হয়ে যায়, রূপসা মাঝি লাল চোখের কোন মেয়ে নয় মোটেই, রূপো মাঝে – মানে মাঝখানে রূপো যেটা সোনার পাতে মোড়া আর তার চোখটা লাল। কনজাংটিভাইটিস থেকে লাল নয়। তিন নম্বরের ভার্মাসায়েব ইউপি বা বিহারের কোন ভদ্রলোক নন, তিনি বরং বিদেশী – মায়ানমার, যার পুরোনো নাম ছিল বার্মা, আজও সেরা চুনির উৎস হিসেবে বার্মার নামই বলা হয়, বার্মিজ রুবি। কাজেই চুনিলাল ভার্মা আসলে, বার্মিজ চুনি, যার রঙ লাল। এরপরে একটু কনফিউসান ছিল, এজ ৭৫-৮৫, মানে কি অত বছরের পুরোনো? জিরো পয়েন্ট ডাই-গ্রামটাই বা কি ব্যাপার? প্রাকৃতিক মানে নেচারাল, আর চিকিৎসা হয় নি মানে তো আনট্রিটেড। তার মানে চুনিটা ন্যাচারাল আর আনট্রিটেড, কিন্তু মাঝের শব্দ গুলো কি বোঝা যাচ্ছে না। নীল, তোমার দাদার মোবাইলে গুগ্‌ল্‌ ঘেঁটে পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হল, age আসলে age নয়, ওটা আসলে edge, মানে চুনির সাইজ ৭.৫ বাই ৮.৫ মিলিমিটার ওজন জিরো পয়েন্ট দ্বি গ্রাম মানে ০.২ গ্রাম ব্যাস আর সমস্যা নেই পুরো ব্যাপারটা এবারে সবটা মিলে হল, সোনার বরণ মাছ, মাঝখানে রূপো, ১৮ ক্যারাট - ১৬০ গ্রাম সোনার পাতে মোড়া, চোখদুটো লাল - বার্মিজ চুনি, আয়তাকার সাইজ ৭.৫ বাই ৮.৫ মিলিমিটার, প্রত্যেকটার ওজন ০.২ গ্রাম ন্যাচারাল এন্ড আনট্রিটেড। আসলে প্রেশাস স্টোনের ব্যাপার স্যাপারগুলো তেমন কিছুই জানতাম না, তাই এই জায়গায়টায় বেশ চিন্তায় পড়ে গেছিলাম
‘না, বৌদি, এ ধাঁধাঁর সমাধান, আমার বাবা এলেও করতে পারতেন না’। নীলকাকুর এ কথায় বাবা খুব জোরে হেসে উঠলেন, বললেন,
‘কি বলছো তুমি, নীল। তোমার বাবাই তো এই ধাঁধাঁটা বানিয়েছিলেন’। বাবার এই কথায় সকলেই এবার হাসলেন, নীলকাকুর মাও খুব মজা পেলেন কথাটায়। নীল কাকু একটু অপ্রস্তুত হয়ে, মাথা চুলকে হেসে বললেন,

‘তাও তো বটে। ঠিকই বলেছেন, সমরেশদা। তবে, যাই বলুন বৌদির জবাব নেই। এবারে ব্যাংকের চাবির ব্যাপারটা, বৌদি’?.....

 ["তিন এক্কে তিন - হেমকান্ত মীন" বইয়ের প্রথম উপন্যাসের এক ঝলক। 
পুরো পড়তে হলে বইটি কিনতেই হবে।] 




সর্বনেশে নেশা 


........আটটা বিয়াল্লিশ মিনিটে মুকুলকে সঙ্গে নিয়ে দীপ্তিদি ড্রয়িংরুমে ঢুকল। ড্রয়িংরুমে এখন আমরা কেউই নেই। গ্লাসটপ টি টেব্‌লের ওপর মিসেস বটব্যালের ভ্যানিটি ব্যাগটি রাখা আছে। দীপ্তিমাসি মুকুলকে সোফায় বসতে বলল – আর বলল ‘বৌদিমণি এখনই আসছে, তুমি একটু বসো’

ড্রয়িং রুমে না থাকলেও আমরা পাশের ঘরের পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়েছিলাম, মুকুল কি করে দেখার জন্যে। সেভাবেই দীপ্তিদিকে সব বোঝানো ছিল – মুকুলকে কোন সোফায় বসাতে হবে। মুকুল সোফায় বসল। মুখের মধ্যে কিছু একটা চিবিয়ে চলেছে মুকুল – সেটা চিউয়িংগাম ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর মুকুল একটু ব্যস্ত হয়ে উঠল, বার বার তাকাতে লাগল পিছনের দরজার দিকে আর এ পাশে ঘরের দরজার দিকেও - যার আড়ালে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। তারপর পকেট থেকে বার করল ছোট্ট একটা প্যাকেট – প্যাকেটে সাদা গুঁড়ো। এরপর উঠে দাঁড়িয়ে মিসেস বটব্যালের ব্যাগের সাইড চেন খুলে রেখে দিল ব্যাগটাএরপর মুখের থেকে চিউয়িং গামের ডেলাটা বের করতেই, আমরা সকলে ঘরে ঢুকলাম একসঙ্গে। পিছনের দরজায় এসে দাঁড়াল রামশরণ দুবে আর দীপ্তিদি।

আমাদের সকলকে দেখে মুকুলের মুখ থেকে রক্ত সরে গেল – একদম ফ্যাকাসে, বিবর্ণ মুখ তার। মিসেস বটব্যাল কাছে গিয়ে ভ্যানিটি ব্যাগটা মুকুলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিলেন, মিঃ বটব্যাল বললেন –
‘ব্যাগের ভেতরে হাত দিও না, ওই হেরোয়িনের প্যাকেটে ওর আঙুলের ছাপ রয়েছে, আমি এক্ষুণি আমাদের থানার বড়োবাবুকে ফোন করছি, তারপর তোমাকে নিয়ে যা করার তাঁরাই করবেন’।
‘আমরা বা আমার ছেলে তোমার কি ক্ষতি করেছি, মুকুল? তুমি এভাবে সুপুর সর্বনাশ করছিলে কেন’? মিসেস বটব্যাল খুব আবেগের সঙ্গে জিগ্যেস করলেন মুকুলকে। ‘আমরা স্বপ্নেও তোমার কথা ভাবিনি, এতটাই বিশ্বাস ছিল তোমার ওপর, সেই তুমি কিনা এমন করলে? কেন, কেন, মুকুল, কেন – বলতেই হবে তোমাকে। তুমি যদি না বল, তোমার মেসোমশাই কিন্তু পুলিশে খবর দিতে বাধ্য হবেন এবং তুমি নিশ্চয়ই জানো একজন মাদক পাচারকারী হিসেবে তোমার কি ভয়ংকর শাস্তি হতে পারে’।
মুকুল কিছু বলল না। ও এখন বিধ্বস্ত, মাথা নীচু করে খুব সংকুচিত ভঙ্গিতে সোফায় বসল আমরাও সবাই বসলাম। মুকুল বলল-
‘একটু জল খাব, মাসীমা’।
‘দীপ্তি, এক গ্লাস জল এনে দাও তো। আমাকে মাসীমা বলতে তোমার লজ্জা হচ্ছে না, এতদিন ধরে তুমি আমাদের সর্বনাশের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলে? তুমি কি বলবে, কেন এমন করলে, নাকি সত্যি পুলিশ ডাকব’? মিসেস বটব্যালের গলায় এখন তীব্র ক্রোধের সুর।....




 ["তিন এক্কে তিন - হেমকান্ত মীন" বইয়ের দ্বিতীয় উপন্যাসের এক ঝলক। 
পুরো পড়তে হলে বইটি কিনতেই হবে।] 



মূর্তি রহস্য

....‘পারবেন না, সে হলে এতক্ষণ পালাতেন...কথাটা আমি শুনতে পেলাম ফোন ছাড়াই, কারণ আমি বসেছিলাম গাড়ির ডানদিকে আর পাস করে যাওয়ার সময় অ্যাম্বাসাডার গাড়ির বাঁদিকে বসা অনাদিবাবুর গলা স্পষ্ট শুনতে পেলাম – যাবার সময় ঘাড় উঁচু করে দেখে নিলেন আমাদের দুজনকে। বললেন, 
‘কথা না বাড়িয়ে চলে আসুন পিছনে পিছনে ...আপনার তৈপাড়া দেখার খুব শখ না? চলে আসুন’।

বিকাশদা গাড়ি স্টার্ট করে পিছনে পিছনে চলতে লাগল। মা খুব চাপা গলায় বলল আপনার লোকদের বলুন – সুমোটাকে বেশ একটু তফাতে নিয়ে আসতে। মা ফোন থেকে মিস করলেন বাবাকে, বাবাও রওনা হয়ে পড়লেন। আমার বুকের ভেতর তখন ড্রাম পিটছে কেউ। মিনিট পনেরর মধ্যে আমরা লোকালয় ছাড়িয়ে মোটামুটি ফাঁকা জায়গায় চলে এসেছি। কয়েকটা ওয়্যারহাউস কিংবা কোল্ড স্টোরেজ পার হয়ে গিয়ে শুরু হয়ে গেল ফাঁকা রাস্তা – আর দুপাশে ধান ক্ষেত। আরও মিনিট পাঁচেক পরে সামনের গাড়িটা দাঁড়িয়ে গেল। একদম মাঝ রাস্তায় একটু আড়াআড়ি ভাবে, যাতে আমাদের গাড়িটা চট করে না বেরিয়ে যেতে পারে। পিছনের দরজা খুলে রাস্তায় নেমে এলেন – অনাদিবাবু। এখনো সকালের মতোই দ্যুলোকবাবুর ছদ্মবেশে। সেই সাদা দাড়ি গোঁফ, চুল। তৈপাড়া গ্রাম থেকে ওঁনাকে সংবাদ দেবার মতো কেউ নেই বলেই মনে হল।

গাড়ি থেকে নেমে একটু এগিয়ে এসে বললেন –
‘কই নামুন, তৈপাড়া দেখবেন না’? মা নামতে নামতে বিকাশদাকে চাপাস্বরে বললেন গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখতে। আর স্বপনবাবুকে বললেন ‘রেডি তো’? অনাদিবাবু বললেন –
‘পাথরগুলো কোথায়? নিয়ে এসেছেন তো’? আমিও নেমে পড়লাম, মায়ের ডানদিকে সামান্য তফাতে একসঙ্গে হেঁটে চললাম মায়ের পাশে পাশে। মা বললেন –
‘এই হাত ব্যাগে আছে, আনছি’গাড়িদুটোর মধ্যে মিটার পঞ্চাশ কি ষাটের দূরত্ব
‘কোন রকম চালাকি নয়, ম্যাডাম। আমার হাতে কি আছে দেখেছেন কি’?
‘হ্যাঁ, রিভলভার’।
‘এক্স্যাক্টলি। আপনি বেশ বুদ্ধিমতী কিন্তু বড্ড কৌতূহলী আর দুঃসাহসী’।
কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা, অনাদিবাবু আর হয়তো হাত পাঁচেক দূরে। আমার চোখের সামনে তখন অনাদিবাবুর হাতে ধরা রিভলভারের নল আর মাথার মধ্যে সুমনদা – আমাদের ক্যারাটে ট্রেনারের ইন্‌স্ট্রাকশন্‌স্‌গুলো মনে পড়ছে।
মা ব্যাগ খুলে নীচু হয়ে খুঁজতে শুরু করলেন আর এক পা এক পা করে এগোতে লাগলেন অনাদি বাবুর দিকে।
আর মাত্র দুহাত, মা আমার দিকে তাকালেন – ইশারা করলেন আর বললেন –
‘ভুটকু, সামনে দাঁড়াতো গাড়ির হেডলাইটটা চোখে লাগছে - কিছুই দেখা যাচ্ছে না’ নিমেষের মধ্যে আমি চিতার মতো লাফিয়ে উঠে ডান পায়ে সজোরে লাথি মারলাম অনাদির হাতে – রিভলভার ছিটকে পড়ল পিচের রাস্তায় অনেকটা দূরে। তারপর বিদ্যুতগতিতে হাত মুঠি করে ঘুষি মারলাম অনাদিবাবুর মুখে, বেচারা এমনই অবাক হয়েছিল এতটুকুও সরে যাবার সময় পায় নি। গলা দিয়ে একটা আর্ত আওয়াজ করে অনাদিবাবুর শরীরটা পড়ে গেল রাস্তায়, বেশ ভারি শব্দ করে। পড়ে থাকা অনাদিবাবুর ডানহাতটা টেনে পিছনের দিকে আমি মুচড়ে ধরতে চীৎকার করে উঠল অনাদিবাবু। বিকাশদাও নেমে এসেছিল হাতে ডান্ডা নিয়ে – জিগ্যেস করল -...



কোন মন্তব্য নেই: