এই লিংকে ক্লিক করলে বাড়ি বসে পেয়ে যাবেন, "দশে দশ" গল্প সংকলন।
http://sristisukh.com/ss_wp/product/%e0%a6%a6%e0%a6%b6%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a6%b6/?fbclid=IwAR08yJhrMXE6sQy01kjitrsscUDnSsmbjMU3KaN7ve2CE_T9age-wWiiX08
এই সংকলনের নবম গল্প "স্তন্যদায়িনী"-র কিছু অংশ
....বাসন্তীদি
ঠিকাদার আলির কাছে নিয়ে গেল, বলল – ও আলি মিয়া, এই লাও এই মেয়েটাও কাজ করবে...।
আলি মিয়ার মুখ ভর্তি গুটখার থুথু। আকাশপানে মুখ তুলে কি যে বলল – ঠাহর করা গেল না।
বাসন্তীদি বললে আ মোলো যা, মুখের ওই কাচড়া ফেলো দিকি, কি যে কতা বলো বো বো বো করে
- কিচুই বোঝা যায় না। আলি মিয়া মুখের ভেতর জমানো, বালতি খানেক থুথু উগরে দিয়ে
খ্যাঁ খ্যাঁ করে হাসলে। তারপর খুব রসিক চোখে বাসন্তীদির দিকে তাকিয়ে, মিচকে হেসে বললে – কি কতা শুনবি রে, বাসন্তী – মনের কতা না
প্রাণের কতা? মরণ আর কি, কত ঢং...লাও, লাও ওর সংগে কতা কয়ে লাও। আলি মিয়া এবার চোখ
ফেরাল মালতীর দিকে।
হাড়গিলের মতো
শুঁটকে চেহারা। বগলে আবার একখানা ভূতের মতো ছানা। মাথাটা হেঁড়ে। পেটটা ড্যাগরা।
হাত পা গুলো কাটি কাটি। সেই থেকে নাগাড়ে ককিয়ে চলেছে কাকের মতো। দেখেই আলি মিয়ার
মেজাজটা বিগড়ে গেল। এ দিয়ে তার কোন কাজই চলবে না। ও পারবেই না মাথায় ঢালাইয়ের
তাগাড়ি বইতে। দু তাগাড়ি মাল তুলেই হ্যা হ্যা করে হাঁপাবে। ওর মধ্যে
আর জোয়ানি নেই রে, বাসন্তী। বাসন্তীর দিকে তাকিয়ে এক চোখ বন্ধ করে আবার খ্যাঁ
খ্যাঁ করে হাসল। সে না পারুক, অন্য কত কাজ তো রয়েছে, ও মিয়া। লাগিয়ে দাও না কিচু
একটাতে। আলি উঠে দাঁড়াল – জোর হাঁক পাড়ল – সকলের উদ্দেশে - সাতটা বেজে গেচে কখন,
একনো সব গুলতানি করছিস কখন শুরু হবে রে ঢালাই? এই কাশেম বেলচা ধর – বাসন্তী তোর মেয়েছেলেদের
বল তাগাড়ি ধরতে।
উইঞ্চ মেসিনে
গুড় গুড় করে উঠে আসছে ঢালাই। রডের জালির ওপর কাঠের তক্তা পেতে প্ল্যাটফর্ম বানানো হয়েছে
দু জায়গায়। উইঞ্চ থেকে তরল ঢালাই হড়াৎ করে নেমে আসছে প্ল্যাটফর্মে। দুপাশে বেলচা
ধরে আছে দুটো লোক। এক তাগাড়িতে এক বেলচা মাল তুলে দিচ্ছে, আর সেটা মাথায় নিয়ে
মেয়েগুলো চলে যাচ্ছে ছাদের অন্য প্রান্তে। ঝড়াস করে ঢেলে তাগাড়ি খালি করে দিচ্ছে ঠিক
জায়গায়। ও প্রান্তে আছে মিস্তিরি – সে দেখিয়ে দিচ্ছে কোথায় কখন ঢালতে হবে – এই
কাজ। কিছুই না। এক ঘেয়ে। এক টানা। পিঁপড়ের সারির মতো অবিরাম বয়ে চলা ঢালাই ভরা
তাগাড়ি। এক সারি চলছে তাগাড়ি ভরা ঢালাই নিয়ে, আরেক সারি খালি তাগাড়ি নিয়ে আসছে
ঢালাই ভরে নেওয়ার জন্যে। পায়ের তলায় রডের জালি, তার ওপর দিয়ে চপ্পল পায়ে হাঁটাটাই
যা একটু শক্ত। জালি গুলো হাঁটার সময় বসে যায়। জালির ফাঁকে পা আটকে গেলে তাগাড়ি
সমেত মুখ থুবড়ে পড়তে হবে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল মালতী। মেয়েকে কোলে নিয়ে মালতী দাঁড়িয়েই
ছিল, তাকে আলি মিয়া হ্যাঁ ও বলে নি, না ও বলে নি। বাসন্তীদি কাজে লাগার আগে বলে
গেছে দাঁড়াতে – একটা কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
শুরুটা করতে যা
একটু ঝকমারি, শুরু হয়ে গেলে ঠিক চলতে থাকে। আধা ঘন্টার মধ্যেই ঢালাইয়ের প্রক্রিয়া
চলে এল বাঁধা ধরা ছন্দে, নিশ্চিন্ত মনে একধারে এসে দাঁড়াল আলি মিয়া – এক প্যাকেট
গুটখা আর সঙ্গে জর্দার একটা প্যাকেট উপুড় করে দিল মুখের ভেতর – তারপর দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করতে লাগল – কাজের ধরনধারণ। মালতী পায়ে পায়ে আলি মিয়ার কাছে গেল।
কিচু কাজ দেন না, অ বাবু? আলি মিয়া এতক্ষণ ভুলেই গিয়েছিল, মালতীকে দেখে মনে পড়ল –
কি কাজ তরে দি বল দিকি। এক কাজ কর নীচে যা আজ সব মিলে শ’ দেড়েক লোক খাবে তাদের
রান্নার যোগাড়ে তুই যা। ধোয়া মোচা। বাঁটা বাঁটি, কাটা কুটি – পারবি তো? রশিদ আছে
তারে গিয়ে বল – আমি পেটিয়েচি। সে দেকিয়ে দেবে। কত দেবে বাবু? অ্যাঃ কত আর দেব তোকে
– পঞ্চাশ দেব যাঃ, আর দুপুরের খাওয়া...যাঃ।
২টি মন্তব্য:
এ গল্পটা আমি আগেও পড়েছিলাম। এর পর কোথাও কোনো কামিন দেখলেই আমার এই গল্পটা মনে পড়ত...
হুঁ, তার মানে মনে দাগ কাটার মতো গল্প!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন